আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ- নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত গেজেটকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উত্তাল জনতা । রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় হাজারো মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয়পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দূরপাল্লার যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের অন্তর্গত চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদেই এ আন্দোলন। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিজয়নগরের মানুষ।
সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, “বিজয়নগরকে খণ্ডিত করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে এই দুই ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এখানকার জনগণ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন।”
যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আফজাল হোসেন বলেন, “অখণ্ড বিজয়নগরের দাবি আমাদের ন্যায্য দাবি। জনগণের রক্ত-ঘামে গড়া এই বিজয়নগরকে কেউ খণ্ডিত করতে পারবে না। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে।”
কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা আশিকুর রহমান আশিক বলেন, “এটি নিছক আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস নয়, এটি বিজয়নগরের জনগণের সঙ্গে অন্যায়। তরুণ প্রজন্ম এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে।”
ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, “জনগণের দাবি উপেক্ষা করে আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না, জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ন্যায্য অধিকার আদায় করব।”
এ এইচ এম গোলাম জহির বলেন, “বিজয়নগরবাসী কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। গেজেট বাতিল করে চান্দুরা ও বুধন্তিকে আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
মহিলা নেত্রী শিউলী আক্তার বলেন, “আমরা নারীরা এই আন্দোলনে শরিক হয়েছি, কারণ এটি শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয়—এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। নারীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার।”
যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিজয়নগরের মানুষ ঘরে বসে থাকবে না।” এ সময় আরও উপস্তিত ছিলেন, আলী ইমরান, আফজাল হোসেন আলমগীর, হুমায়ুন কবির খান, ছায়েদ খন্দকার, আবদুল কাদের, হুমায়ুন কবির ভূইয়া, হেলাল উদ্দিন, হেবজু খান, আবদুল কাদের, জহির, মাহবুবুল আলাম, আঃকাইয়ুম রাষ্টু, এস এম রাষ্টু সরকার, মোহাম্মদ আলী, সোহাগ খন্দকার, সহ সর্বস্তরের জনগণ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
অবরোধের কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়ি আটকা পড়ে যায়। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে পড়েন।
আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। এখন সবার দৃষ্টি স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।